বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১
Proval Logo

আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখন থেকে শুরু : ট্রাম্প

প্রকাশিত - ২১ জানুয়ারি, ২০২৫   ১২:৫৮ এএম
webnews24

২৪ ঘন্টা অনলাইন : দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার কয়েক মিনিট পর ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার মহত্ত্বের একটি নতুন যুগ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টার দিকে ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ক্যাপিটল রোটুন্ডায় তিনি শপথ গ্রহণ করেন। প্রথম ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হচ্ছে।

ট্রাম্পের আগে শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।

‘আমেরিকার স্বর্ণযুগের শুরু’

ট্রাম্প বলেন, আমেরিকার স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হচ্ছে। আজ থেকে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ ও সম্মানিত হবে। আমি খুব স্পষ্টভাবে বলছি—আমেরিকা হবে আমার প্রথম অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, আমাদের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা হবে। আমাদের নিরাপত্তা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ন্যায়বিচারের ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। মার্কিন বিচার বিভাগের নৃশংস, সহিংস ও অন্যায় অপব্যবহার বন্ধ করা হবে। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হবে একটি গর্বিত, সমৃদ্ধ ও স্বাধীন জাতি গঠন করা।

বাইডেনের সমালোচনায় মুখর ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম ভাষণে বাইডেন প্রশাসন এবং তাদের অভিবাসন সংকট ব্যবস্থাপনার কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, দেশের চ্যালেঞ্জগুলো সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র একটি উগ্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের ওপর বিশ্বাসের সংকটের সম্মুখীন হয়েছে।

সাবেক প্রশাসন সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা ভয়ংকর অপরাধীদের জন্য আশ্রয় ও সুরক্ষা প্রদান করেছে, যারা অবৈধভাবে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে।

ট্রাম্প দাবি করেন যে সরকার বিদেশি সীমান্ত রক্ষার জন্য সীমাহীন অর্থায়ন করেছে। কিন্তু আমেরিকার সীমান্ত রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমাদের এমন একটি সরকার আছে, যা ঘরের ভেতরকার সাধারণ একটি সংকটও সামলাতে অক্ষম।

‘আমেরিকার অবনতির শেষ’

ট্রাম্প বলেন, তাকে সম্পূর্ণ ও নিরঙ্কুশভাবে সেই ভয়ংকর বিশ্বাসঘাতকতা প্রত্যাহার করার জন্য ম্যান্ডেট দেয়া হয়েছে, যা ক্ষমতাসীনরা আমেরিকান জনগণের বিরুদ্ধে করেছে। তিনি জনগণকে তাদের বিশ্বাস, তাদের সম্পদ, তাদের গণতন্ত্র ও তাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেন, এই মুহূর্ত থেকে আমেরিকার অবনতির শেষ হলো।

তিনি বলেন, তার সরকার প্রতিটি সংকট মর্যাদা, শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে মোকাবিলা করবে। প্রতিটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও বিশ্বাসের নাগরিকদের জন্য সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনবে। ২০ জানুয়ারি ২০২৫ হলো মুক্তির দিন।

তিনি বলেন, আমার আশা, সাম্প্রতিক নির্বাচন আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মহান এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারির হুমকি

ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনে কী কী নির্বাহী আদেশ দেবেন, সেসব বিষয়েও ভাষণে কথা বলেছেন ট্রাম্প। আজই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে একটি নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করবেন। তিনি বলেন, সব অবৈধ প্রবেশ তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার বিদেশি অপরাধীদের তাদের নিজ দেশগুলোতে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করবে।

এ ছাড়া মেক্সিকোতে থাকার নীতি পুনর্বহাল এবং সীমান্তে আরও সৈন্য ও মানবসম্পদ পাঠানো হবে বলেও জানান ট্রাম্প।

আজকের নির্বাহী আদেশে কার্টেল সংগঠনগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করবেন বলে ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ১৭৯৮ সালের এলিয়েন শত্রু আইন ব্যবহার করে তিনি সরকারকে নির্দেশ দেবেন যে ফেডারেল ও রাজ্য আইন প্রয়োগকারীদের পূর্ণ ও বিশাল ক্ষমতা ব্যবহার করে মার্কিন মাটিতে বিদেশী গ্যাংগুলোর অবসান ঘটানো হবে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির কৃতিত্ব নিলেন ট্রাম্প

গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তির কৃতিত্ব নিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, তিনি শান্তিদূত ও ঐক্যবদ্ধকারী হবেন। গাজায় হামাসের হাতে আটক তিন ইসরায়েলি জিম্মির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকাল তাদের পরিবারগুলোর কাছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, আমেরিকা তার সঠিক স্থান পুনরুদ্ধার করবে। পৃথিবীর সবচেয়ে মহান, সবচেয়ে শক্তিশালী, সবচেয়ে সম্মানিত জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বের পক্ষ থেকে বিস্ময় এবং প্রশংসা অর্জন করবে। এ সময় শীঘ্রই মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকার উপসাগর রাখবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।।

মঙ্গলে যাবেন মার্কিন নভোচারীরা

ট্রাম্প বলেন, তার বার্তা হলো সাহস, উদ্যম এবং ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করা। তিনি তার ভাষণে উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা বলেন। তিনি বিজয় ও সফলতার নতুন শিখরে পৌঁছানোর বিষয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পদ বৃদ্ধি করবে, তার অঞ্চল সম্প্রসারিত করবে এবং তার পতাকাকে নতুন দিগন্তে বহন করবে—যার মধ্যে রয়েছে মঙ্গলগ্রহ।

‘ভবিষ্যৎ আমাদের’

‘ভবিষ্যৎ আমাদের’ বলে আজকের ভাষণ শেষ করেন ট্রাম্প। নিজের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমেরিকান জনগণ কথা বলেছেন। কোনো কিছু করা অসম্ভব নয়, এর প্রমাণ হিসেবে আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমেরিকায় অসম্ভব কাজটি করা আমাদের সেরা কাজ। আমেরিকাকে কখনো দখল বা ভীত করা যাবে না।

তিনি বলেন, আমরা ব্যর্থ হব না। আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র হবে একটি মুক্ত, সার্বভৌম ও স্বাধীন জাতি। ভবিষ্যৎ আমাদের এবং আমাদের স্বর্ণযুগ এখনই শুরু হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স ও বিবিসি।
২৪ঘন্টা/এআর

 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন