২৪ঘণ্টা অনলাইন : গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চারজন নিহত ও ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম। সংঘর্ষের ঘটনায় ১৮ ডিসেম্বর বুধবার সাদ ও জুবায়েরপন্থিদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন এবং সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের যে চারজন ভাই গত রাতে শহিদ হয়েছেন, আল্লাহ যেন তাদের বেহেশত নসিব করেন। আর যারা আহত হয়েছেন, তারা যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তাদের সুকিচিৎসার জন্য যদি কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় আমরা অবশ্যই নেব।
সাদপন্থিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, তারা দুই পক্ষ যদি আলোচনা করে সমাধান করতে পারে, তাহলে সাদপন্থিরা ইজতেমায় অংশ নিতে পারবেন। ইজতেমার তারিখ সরকার বাতিল করেনি। তারা আলোচনা করুক। তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই।
নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামে আমিরুল ইসলাম বাচ্চু (৭০), ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল (৬০), বগুড়ার তাজুল ইসলাম (৭০)। আরেকজনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর আহতদের মধ্যে রয়েছেন আ. রউফ (৫৫) বি. বাড়িয়া, মজিবুর রহমান (৫৮) ময়মনসিংহ, আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮) টঙ্গী, আরিফ (৩৪) গোপালগঞ্জ, ফয়সাল (২৮) সাভার, তরিকুল (৪২) নরসিংদী, সাহেদ (৪৪) চট্রগ্রাম, উকিল মিয়া (৫৮) নরসিংদী, পান্ত ( ৫৫) টঙ্গী, খোরশেদ আলম (৫০), বেলাল (৩৪) কেরানীগঞ্জ, আনোয়ার (৫০) নারায়ণগঞ্জ, আবু বক্কর (৫৯) নারায়ণগঞ্জ, আরিফুল ইসলাম (৫০), আনোয়ার (২৬) সাভার, আনোয়ার (৭৬) নোয়াখালী সদর, ফোরকান আহমেদ (৩৫), সাতক্ষীরা, আ. রউফ (৫৫) বি. বাড়িয়া, মজিবুর রহমান (৫৮) ময়মনসিংহ, আ. হান্নান (৬০) গাজীপুর, জহুরুল ইসলাম (৩৮) টঙ্গী, সাহেদ (৪৪) চট্রগ্রাম। অন্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ইজতেমার তারিখ নিয়ে তিনি বলেন, তারিখ পরিবর্তন হয়নি। সরকার চায় উভয়পক্ষ আলোচনা করে সমাধানের পথে আসুক। এ সময় তিনি সবাইকে ময়দান ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য না দেওয়ারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমার মাঠ দখল নিয়ে সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলার পর প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করা হবে। ইজতেমার তারিখ পরিবর্তন হয়নি। সরকার চায় উভয়পক্ষ আলোচনা করে সমাধানের পথে আসুক।
বৈঠক শেষে নির্দেশনা মেনে সবাইকে মাঠ ছাড়ার আহ্বান জানান সাদপন্থি শীর্ষ আলেমরা। এদিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্য়ন্ত উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।
গাজীপুর পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী শুক্রবার থেকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিন ইজতেমা করতে চান মাওলানা সাদের অনুসারীরা। মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা তাঁদের এখানে ইজতেমা করতে দিতে চান না। এ জন্য আগে থেকে ইজতেমা মাঠ দখলে নেন জুবায়ের অনুসারীরা। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত রাত ৩টার দিকে সাদপন্থিরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রীজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় ময়দানের ভেতর থেকে যোবায়েরপন্থিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে সাদপন্থিরাও পালটা হামলা চালায়। একপর্যায়ে সাদপন্থিরা ময়দানে প্রবেশ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
২৪ঘণ্টা/শাহ