বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১
Proval Logo

৩৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম শ্রম রপ্তানি আগস্টে

প্রকাশিত - ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪   ০৯:০৫ পিএম
webnews24

২৪ঘণ্টা অনলাইন : রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গেল আগস্ট মাসে বাংলাদেশ থেকে শ্রম রপ্তানির সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছেÍ যা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। জনশক্তি, কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)  এর তথ্যমতে, আগস্টে মাত্র ৫০,৪২৬ জন কর্মী বিদেশে গিয়েছেন যা আগের মাসের তুলনায় ২৯ শতাংশ এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৩ শতাংশ কম। শ্রমশক্তি রপ্তানিতে এমন পতনের জন্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে, গত জুলাই থেকে শুরু হওয়া ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকা এবং অবশেষে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতে যে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, এতে শ্রম রপ্তানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে, আগস্টে বাংলাদেশি শ্রম অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রধান গন্তব্য সৌদি আরবে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রায় ৪৪ শতাংশ কমেছে। দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ায় বাংলাদেশের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া স্থগিত করে সৌদি দূতাবাসÍ যা শ্রম রপ্তানিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া, শ্রম খাতে বিএমইটির ক্লিয়ারেন্স কার্ড ইস্যুর বিষয়টিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। তবে এতসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, শ্রম নিয়োগকারীদের আশা, শীঘ্রই রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে শ্রম রপ্তানি খাত আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।

শ্রম রপ্তানিকারকদের ধারণা, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির যে প্রভাব বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ওপর পড়েছে, তা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে চলতি সেপ্টেম্বরে। কারণ যেকোনো কর্মীর অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সাধারণত দুই মাস বা এরচেয়ে বেশি সময় লাগে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) এর সর্বশেষ কমিটির যুগ্ম মহাসচিব টিপু সুলতান গণমাধ্যমকে বলেন, সাম্প্রতিক ছাত্র-গণআন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে কর্মী পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনেক কাজে স্থবিরতা তৈরি হয়েছিল। বিশেষ করে, ঢাকাস্থ সৌদি অ্যাম্বাসি অন্তত চার সপ্তাহ এ সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু রাখেনি। অন্যদিকে কর্মীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট, বিএমইটি ক্লিয়ারেন্সের জন্য ঢাকায় আসা-সহ বেশকিছু কাজ সময়মতো সম্পন্ন করা যায়নি। তবে আশা করা যায়, চলতি মাস থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হলে বিদেশে কর্মী পাঠানোও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, যোগ করেন তিনি। এদিকে, গত তিন মাসে বৈদেশিক কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়া।

মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধের আগে, চলতি বছরের জুনে ৫৫,০৪৫ কর্মী বিদেশে পাঠাতে পেরেছিল  বাংলাদেশ। পরে একই মাসের শুরুতে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয় দেশটিÍ এই স্থগিতাদেশ এখনও বহাল রয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন টিপু সুলতান।

এদিকে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি আরবেÍ গত মাসে এই সংখ্যা ছিল ২৬,৮৪৩ জন এবং এর আগের মাস জুলাইয়ে ছিল ৪৭,৮৬৭ জন। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে এরপরেই রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সিঙ্গাপুর এবং কুয়েত। বেশিরভাগ শ্রমিক নিয়োগ হয়েছে সেদেশের নির্মাণ খাতে। এছাড়া, অনেকে পরিষেবা খাত ও গৃহস্থালির কাজেও নিয়োগ পেয়েছেন।

বিএমইটির উপ-পরিচালক (অভিবাসন) সাজ্জাদ হোসেন সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কাছে কাজের জন্য যেসব চাহিদাপত্র থাকে, সেগুলো তারা  ভিসার জন্য কর্মীর পাসপোর্টসহ ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসে জমা দেয়।  তবে আমরা শুনেছি, গতমাসে দূতাবাস বন্ধ থাকায় এজেন্সিগুলো তা জমা দিতে পারেনি। এছাড়া, অন্যান্য মাসের তুলনায় আমাদের এখানেও বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের জন্য আবেদন জমা পড়েছে কম। আশা করি, এ মাস থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে, যোগ করেন তিনি।

এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি ইউরোপের কিছু দেশও বাংলাদেশ থেকে স্বল্প পরিসরে শ্রমিক নিয়োগ করছে। এরমধ্যে গতমাসে ক্রোয়েশিয়ায় ২৫৩ জন, সাইপ্রাসে ১১৬ জন, পর্তুগালে ২৬৯ জন, রোমানিয়ায় ১৭৩ জন, সার্বিয়ায় ৩২২ জন এবং যুক্তরাজ্যে ১২৫ জন পাড়ি দিয়েছেন।

অন্যদিকে, ভারতীয় ভিসা স্থগিত থাকার কারণে কয়েক হাজার বাংলাদেশি ইউরোপে তাদের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। কারণ পশ্চিমের অনেক দেশে যাওয়ার জন্য ভারত থেকে ভিসা সংগ্রহ করতে হয়। রিক্রুটিং এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ ফর ইউরোপ অ্যান্ড ডেভেলপড কান্ট্রিস এমনটিই জানিয়েছে। ক্রোয়েশিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও পর্তুগালের মতো দেশগুলোর বাংলাদেশে কোনো মিশন নেই। ফলে বাংলাদেশিরা এসব দেশে যেতে চাইলে, ভিসা সংগ্রহের জন্য তাদেরকে ভারতে যেতে হয়। তবে আগস্টের শুরু থেকেই ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ইউরোপের এসব দেশে যেতে চাওয়া শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা। করোনা ভাইরাস মহামারি শুরুর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিমাসে অন্তত ৬০,০০০-৭০,০০০ কর্মী বিদেশে যেতেনÍ যা করোনা পরবর্তী সময়ে ১,০০,০০০ বা এর বেশিতে উন্নীত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, সদ্য সমাপ্ত আগস্টে ২.২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করেছে বাংলাদেশÍ যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৩৯ শতাংশ বেশি।

২৪ঘণ্টা/আসো

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন